রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
বনানীতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিয়ার সহ এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার  খিলক্ষেত প্রেসক্লাবের-২০১১ সালের পর আহ্বায়ক কমিটি গঠন ২০২৪ মাধবপুরে সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে যুবদল নেতার মামলা  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলা : এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি শাহ আলম তুরাগে আটক ব্যাংক লুটেরাদের দেশে ফিরে এনে বিচারের আওতায় নিতে হবে: মির্জা ফখরুল হাজীক্যাম্পের সামনে বঙ্গোমাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সড়কের দুই পাশে বসেছে ভাসম্যান বাজা,মাদকসেবিদের দৌরাত্ম  লালমনিরহাটে ফেন্সিডিল সহ নাছিমা গ্রেফতার টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার আজ আসছেন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন বেগম খালেদা জিয়া

নেত্রকোনা থেকে বিলুপ্তির পথে ভাওয়াইয়ার ‘দোতরা, ঝারি সারির আসর

নেত্রকোনা থেকে বিলুপ্তির পথে ভাওয়াইয়ার ‘দোতরা, ঝারি সারির আসর

 

সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা প্রতিনিধি: দৈনিক ঢাকার কন্ঠ নিউজ

 

একতারা, দোতরা,ঝারি,সারি, সারিন্দা, খমক বাদ্য এখন শুধু বইয়েই পাওয়া যায়। এক সময় গ্রাম-গঞ্জের পালাগান, ভাওয়াইয়া, যাত্রাপালা কিংবা বাউল গানের আসরে ছন্দ দিতো এসব দেশীয় বাদ্য যন্ত্র।

কিন্তু কালের আবর্তনে বিলুপ্তির পথে এ লোকজ সংস্কৃতির অনুষঙ্গগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আকাশ সংস্কৃতি আর পৃষ্টপোষকতার অভাবে লোকবাদ্যের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

সেখানে জায়গা নিচ্ছে পাশ্চাত্যের যন্ত্র। এতে নতুন প্রজন্ম যেমন নিজেদের লোকজ সংস্কৃতি চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি বাংলার প্রাণের গান হারাচ্ছে নিজস্বতা।

দোতারা- বাঙালিয়ানার স্বাদ পাওয়া যায় এ বাদ্যে। প্রতিটি গানের দলেই দোতরা বাদক থাকেন, অনেক সময় মূল শিল্পীই বাজান এটি।

প্রচলিত আছে, প্রাচীন বাংলায় প্রথম দোতারার উৎপত্তি। বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বিহারে লোকজ গানে এর প্রচলন ছিল ব্যাপক।

দোতারায় দু’টি তার (স্ট্রিং) মুখ্য। তবে নেত্রকোনার রাজবংশী শিল্পীদের কোথাও ২-৪-৫টি তার থাকার কথা শোনা যায়। গানে তাল দেয় দু’তার-ই।

বাউল শিল্পী মোঃ জসিম বয়াতি বলেন, মূলত ১৫০০-১৬০০ শতাব্দী থেকে বাউলদের মাধ্যমেই এর প্রচলন। ভাওয়াইয়া ছাড়াও বাউল গানেও তাল দিয়ে মানুষকে আদিকাল থেকেই মোহিত করে এসেছে।

নিম বা শক্ত গাছের কাঠ দিয়ে দোতারার মূল বডি তৈরি, যা দেখতে গোলাকৃতির। আর ‘ফিংগারবোর্ড’ বানানো হয় ‘স্টিল’ কিংবা ব্র্যাশ (পিতল) দিয়ে। ‍ মেইন বডির কিছু অংশে থাকে চামড়া। মাথাটি ‘ময়ূর’ এর মাথার আকৃতিতে বানানো হয়, করা হয় কারুকার্যও।

বাউল শিল্পী মোঃ জসিম বয়াতি বলেন, এখন আধুনিক বাদ্যের অনুপ্রবেশে দোতরার ব্যবহার কমে যাচ্ছে। যন্ত্রীরাও পেশা বদল করে চলেছেন জীবিকার প্রয়োজনে।

তবে গানের নিজস্বতা ও ঐতিহ্যটি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা দরকার বলে মত তার।

লোকজ গানের অন্যতম প্রধান বাদ্য সারিন্দা, কালের বির্বতনে এর জায়গাটি নিয়ে নিচ্ছে বেহালা। তবে নেত্রকোনার সামান্য কিছু শিল্পী এখনও যন্ত্র ব্যবহার করেন, ধরে রেখেছেন ঐতিহ্য।

তাদেরই একজন বাউল শিল্পী মোঃ জসিম বয়াতি, এখনও নতুন প্রজন্মের কাছে ‘পালা গানের আসর নিয়ে হাজির হন তিনি, প্রাণ কান্দে মৈশাল বন্ধুরে’ সুর তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে নেত্রকোনার এক ঝারি সারি গানের বক্ত বলেন, যন্ত্রটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নেত্রকোনা অঞ্চলে কোথাও আগের মতো ব্যবহার নেই, একেবারেই হাতে গোনা।

সারিন্দার মাথার ওপর ময়ূর বা অন্যান্য পশুপাখির মাথার নকশা করা থাকে। সেখানে তিনটি কাঠের বয়লা (বা কান) থাকে। দেড় ফুট লম্বা কাঠ দিয়ে তৈরি যন্ত্রটির থাকে চামড়ার তিনটি তার, যা বয়লা থেকে সওয়ারির ওপর দিয়ে সারিন্দার শেষ প্রান্তে আংটা দিয়ে আটকানো থাকে, বয়লা বা কান ঘুরিয়ে প্রয়োজন মতো তারগুলোর সুর ধ্বনি নিয়ন্ত্রণ বা টিউন করা হয়।

যন্ত্রটি বাজাতে ঘোড়ার লেজের তৈরি ছড়ি ব্যবহৃত হয়, যা দেখতে ধনুকের মতো। ‘পটরি’র ওপর বাঁ হাতের অনামিকা আর মধ্যমা দিয়ে তারে চাপ দিয়ে সেই সঙ্গে ডান হাতে ছড় টেনে সারিন্দা বাজানোর নিয়ম বলেই জানালেন।

প্রাচীন এমনকি মধ্যযুগের কলা ও কাব্য সাহিত্যেও এর ব্যবহার ছিলো বলে জানা যায়।

বাউল শিল্পী জসিম বয়াতি বলেন, নেত্রকোনা জেলায় যন্ত্রটির ব্যবহার রয়েছে।

তিনি বলেন, সারিন্দার মতো দেখতে আরেকটি বাদ্যযন্ত্র রয়েছে যার নাম ‘চন্দ্রসারঙ’। যাতে চামড়ার বদলে পিতলের তার ব্যবহার করা হয়। তবে বর্তমানে এসবের সংরক্ষণ নেই বললেই চলে।

তবে ভাওয়াইয়াসহ নেত্রকোনার জনপদের গানে এখনও তাল দেয় করতাল বা জুড়ি, খমক ও ঢোলক। এসব বাদ্যযন্ত্র আর আগের মতো তৈরি হয় না, বসে না গান-বাজনার আসরও।

তাই শিল্পীরাও পেশা পরিবর্তন করে নতুনভাবে জীবিকা উপার্জনে ব্যস্ত।

গান গাইলেও নিজস্বতা থাকে না,’ আক্ষেপ করে বলছিলেন ভাওয়াইয়া,ঝারি সারির বাউল শিল্পী জসিম বয়াতি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গান বাজনা করে নিজের জীবনের পুরোটা সময় ব‍্যয় করেছি, বিনিময়ে কিছুই পেলাম না। আমার বাড়িতে শাহ গাজী কালুর দরবার শরীফ রয়েছে এখানে প্রতি বছর মাঘ মাসের ২১,২২,২৩ তারিখে ওরছ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি আরো বলেন,আমি খুব কষ্ট করে এই ওরছের আয়োজন করি। সরকারি ভাবে কখনো কোনো অনুদান আমি পাইনি এই দরবার শরীফের জন‍্যে।

সরকারের কাছে আমার একটাই দাবী সরকার যেন এই সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার ব‍্যবস্হা গ্রহণ করেন।
এবং আমাদের মতো যারা এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছে তাদের জন‍্যে যেন ভাতার ব‍্যবস্হা করেন।তিনি বলেন আমি বারবার ভাতার জন‍্যে আবেদন করেও ভাতার আওতায় আসতে পারি নাই।তিনি বলেন আমাদের এলাকার অনেকেই আছে যারা ভাতা পাচ্ছে তারা অনেকেই কোনো গানের (গ)ও বলতে পারেনা।

তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আধুনিকতার ছোয়ায় একদিন এই সব ঝারি সারি বাউল গান হারিয়ে যাবে।

 

সোহেল খান দূর্জয়
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
৩০.০৯.২০২১

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com